☆ শাল দুধ কী-
নবজাতকের জন্য জন্মের পরপরই মায়ের দুধই একমাত্র খাবার। শিশু জন্মের পরপরই মায়ের শরীরে প্রথম ঘন আঠালো হলুদ বর্ণের যে দুধ বের হয় তাকে শালদুধ বলে ।
☆শালদুধের উপকারিতা-
শালদুধ শিশুর জন্য প্রথম টিকা হিসেবে কাজ করে এবং শিশুকে বিভিন্ন রোগ থেকে রক্ষা করে।শালদুধ পরিমাণে কম হলেও শিশুর জন্য যথেষ্ট ও পরিপূর্ণ পুষ্টি যোগায় ।শালদুধ খাওয়ালে শিশুর রাতকানা, জন্ডিস ও অন্যান্য রোগ হওয়ার সম্ভাবনা কম থাকে ।শাল দুধ খাওয়ালে মা এবং শিশু উভয়েই সুস্থ থাকে। এ দুধ খাওয়ানোর ফলে মায়ের প্রসবকালীন রক্তক্ষরণ কম হয় এবং জরায়ু দ্রুত স্বাভাবিক অবস্থায় ফিরে আসে ।
☆শুধুমাত্র মায়ের দুধ খাওয়ানোর উপকারিতা-
শুধুমাত্র মায়ের দুধ খাওয়ানো বলতে বুঝায় শিশুকে পূর্ণ ছয় মাস কেবলমাত্র বুকের দুধই খাওয়ানো। এসময় একফোঁটা পানিরও প্রয়োজন নেই ।
☆ শিশুর উপকারিতা -
ডায়রিয়া ও নিউমোনিয়াসহ অন্যান্য অসুখ-বিসুখ কম হয় ।অপুষ্টি হওয়ার সম্ভাবনা কম থাকে ।শারীরিক বৃদ্ধি ও মানসিক বিকাশে সহায়তা করে ।
☆মায়ের উপকারিতা -
জন্মের পরপরই মায়ের দুধ খাওয়ালে রক্তক্ষরণ কম হয়, তাই মা রক্তস্বল্পতার ঝুঁকি থেকে রক্ষা পায়। মায়ের স্তন ও ডিম্বাশয়ের ক্যান্সারের সম্ভাবনা কম থাকে। পূর্ণ ৬ মাস দিনে ও রাতে শুধুমাত্র মায়ের দুধ খাওয়ালে পুনরায় গর্ভধারণের সম্ভাবনাও কম থাকে। মা ও শিশু উভয়ের জন্য মায়ের দুধ খাওয়ালে মায়ের সাথে শিশুর নিবিড় সম্পর্ক গড়ে উঠে । পরিবারের জন্য মায়ের দুধ খাওয়ালে পরিবারের খরচ বাঁচে ।
☆মায়ের দুধ খাওয়ানোর সঠিক পদ্ধতি-
◆ মায়ের আরামদায়ক অবস্থানঃ
মাকে আরাম করে বসে অথবা শুয়ে বুকের দুধ খাওয়াতে হবে। বসা অবস্থায় পিঠ সোজা রাখতে হবে।
◆ শিশুর সঠিক অবস্থানঃ
শিশু মায়ের গায়ের সাথে লেগে থাকবে ।শিশুর মাথা ও শরীর সোজা থাকবে ।শিশু মায়ের স্তনের দিকে সম্পূর্ণ ফেরানো ও শিশুর নাক স্তনের বোঁটার বিপরীত দিকে থাকবে ।শিশুর পুরো শরীর আগলে রাখতে হবে ।স্তনের সাথে শিশুর সঠিক সংযোজনের আগে স্তনের বোঁটা উপরের ঠোঁটে বারে বারে লাগাতে হবে। শিশু বড় হাঁ করলে তাকে স্তনে লাগাতে হবে এবং নিম্নলিখিত ধাপগুলো অনুসরণ করতে হবেঃ
▪থুতনি ও নাক স্তনের সাথে লেগে থাকবে।
▪বড় করে মুখ খোলা থাকবে।
▪শিশুর নিচের ঠোঁট বাইরের দিকে উল্টানো থাকবে।
▪এরিওলা (বোঁটার চারপার্শ্বের কালো অংশ) নিচের দিকের চেয়ে মুখের উপরের দিকে বেশি দেখা যাবে।
▪মায়ের বুকের দুধ খেতে শিশুর অসুবিধা হলে বারবার চেষ্টা করুন এবং চিকিৎসকের পরামর্শ নিন।
▪গর্ভফুল পড়ার অপেক্ষা না করে তাড়াতাড়ি শিশুকে মায়ের বুকের শালদুধ খাওয়ান।
শিশুর জন্য শালদুধের উপকারিতা অনেক। শালদুধ অত্যন্ত পুষ্টিকর। মায়ের দুধে অ্যান্টিবডি থাকে, যা শালদুধে বিদ্যমান। সাধারণত, যেকোনো রোগের টিকা দেওয়ার দুই-চার সপ্তাহ পর তা কার্যকর হয়, অর্থাৎ রোগ প্রতিরোধ করতে পারে। কিছু টিকা আছে, যা একাধিক ডোজ দেওয়ার পর শিশু সেই বিশেষ রোগটি প্রতিরোধ করতে সক্ষম হয়। কিন্তু ‘শালদুধ’ বিশেষ গুণসম্পন্ন বলে তাৎক্ষণিকভাবে কার্যকর, যা একই সঙ্গে অনেক রোগ প্রতিরোধ করতে পারে। আর সে জন্যই শালদুধ হচ্ছে শিশুর প্রথম টিকা।