"জেনে নিন নতুন শিশুর খাবার দাবার কেমন হওয়া উচিত (৬-৮ মাস বয়সী শিশু ) "

"জেনে নিন নতুন শিশুর খাবার দাবার কেমন হওয়া উচিত (৬-৮ মাস বয়সী শিশু ) "

জন্মের পরে ৬ মাস পর্যন্ত শিশু সাধারণত বুকের দুধের উপরেই নির্ভর করে থাকে। কিন্তু ৬ মাস পর থেকে তাকে দুধের পাশাপাশি শক্ত খাবারও দিতে হয় । অনেক বাবা মার জন্য এই নতুন অবস্থার সাথে খাপ খাইয়ে নেয়া শিশুর থেকেও বেশি কষ্টকর হয়ে যায়। কারণ অনেকেই বুঝে উঠতে পারেন না বাচ্চাকে কি খাওয়াবেন আর কিভাবে খাওয়াবেন। এর সাথে যুক্ত হয় অনেকের নানা উপদেশ। ফলে বাবা মা বিশেষ করে মার জন্য টেনশনের বিষয় হয়ে দাঁড়ায় বাচ্চার খাবারের ব্যাপারটি। আজকে সেইসব মায়েদের জন্যই ৬ থেকে ৮ মাস বয়সী বাচ্চাদের খাবার নিয়েই এই আয়োজন।

প্রথমেই বলে রাখি বাচ্চাদের নতুন খাবার খাওয়ানো নিয়ে ভয় পাবেন না। নতুন নতুন টেকনিক আবিষ্কার করা লাগবেনা তাদের খাওয়াতে। শুধু খেয়াল রাখবেন প্রতিদিন অল্প অল্প করে তাকে তার খাবারে অভ্যস্ত করে তুলতে হবে। প্রথম দিনে খেতে না চাইলে জোর করবেন না। নতুন কিছু একটা হঠাৎ করেই তারা খেতে নাই চাইতে পারে। সেক্ষেত্রে ২ দিন পরে আবার চেষ্টা করুন। আবার শুধু এক রকম খাবারই দিবেন না। তাদের খাবারেও অল্প অল্প বৈচিত্র্য আনুন। শুধু চেষ্টা করবেন তাকে তার বয়স অনুযায়ী খাবার দিতে।

যদিও বাচ্চাকে ৬ মাস থেকেই দুধের পাশাপাশি অন্যান্য খাবার দিতে হয়, কিন্তু হঠাৎ করে বাচ্চা ৬ মাসে পড়ল আর খাবার শুরু করে দিলাম এমনটা সাধারণত করা হয় না। বাচ্চাকে আসতে আসতে নতুন খাবার খাওয়ার জন্য উপযোগী করতে হবে। বাচ্চা কখন অন্যান্য খাবার খাওয়ার জন্য তৈরি তার কিছু চিহ্ন আছে। আপনার সন্তানের মাঝে এসব চিহ্ন দেখা না গেলে ভয় পাবেন না। সে এক সাথে সব কিছু করতে পারবে এমন ভাবার কোন কারন নেই।

▪ খেয়াল রাখবেন সে মাথা উঁচু করে রাখতে পারে কি না, তার ঘাড় শক্ত হল কি না।

▪ আপনার বাচ্চা হেলান দিয়ে বসতে পারে কি না খেয়াল করবেন, কারণ বাচ্চা বসতে পারলে তাকে খাওয়াতে সুবিধা হবে।

▪ বাচ্চার ওজন বৃদ্ধির দিকেও খেয়াল রাখবেন। তার ওজন তার জন্মের সময়ের ওজনের দিগুন হলে বুঝতে হবে এখন সে নতুন খাবার গ্রহন করার জন্য তৈরি।

▪ আবার কোন কোন বাচ্চা কাউকে খেতে দেখলে বা নিজে নিজেই অনেক সময় খাবার দেখলে চিবানোর মত করে।

▪ আবার অনেক বাচ্চার দাঁত উঠতে শুরু করে বা মাড়ি শক্ত হতে শুরু করে, তাই সে সব কিছু কামড়াতে চায় এ সময়।

এই জিনিষগুলো খেয়াল করে দেখবেন আপনার বাচ্চার মধ্যে। এসব ছাড়াও আপনার বাচ্চার খাবারের দিকে বিশেষ নজর রাখুন। দিনে ৮-১০ বার খাবার পরেও যদি তাকে ক্ষুধার্ত মনে হয়ই তবে বুঝতে হবে এখন সে নতুন খাবার খাওয়ার জন্য তৈরি। যদি এগুলোর সবগুলো বা কোনটা সে করতে শুরু করে তবে বুঝতে হবে তাকে শক্ত খাবার দেয়া যেতে পারে।

 

☆ কি খাওয়াবেন বাচ্চাকে-

বাচ্চাকে বুকের দুধ খাওয়ানো বন্ধ করবেনা। যদি বাচ্চা বুকের দুধ না পায় সে ক্ষেত্রে ডাক্তারের পরামর্শ অনুসারে ভালো কোন ফর্মুলা দুধ খাওয়াতে পারেন। দুধের পাশাপাশি তাকে চাল, ডাল, বিভিন্ন সবজি যেমন পেঁপে, আলু, ঢেঁড়স ইত্যাদি দিয়ে পাতলা খিচুড়ি রান্না করে খাওয়ান। মসলা পরিহার করবেন। স্বাদের জন্য অল্প লবন দিতে পারেন। প্রথমে শুরু করবেন ১ টেবিল চামচ খাবার নিয়ে। খেয়াল রাখবেন খাবার যেন পাতলা হয় তবে জুসের মতন যেন না হয়ে যায়। বাচ্চা খিচুড়ি খেতে অভ্যস্ত হয়ে গেলে ধীরে ধীরে পরিমান বাড়াবেন। এক টেবিল চামচের জায়গায় তখন ২ টেবিল চামচ দিতে পারেন। এবং সেই সাথে খিচুরিটাও ধীরে ধীরে ঘন করে তৈরি করে দিতে হবে।

 

 

পর্ব- দুই

খিচুড়ির সাথে সাথে বাচ্চাদের অনেকেই সেরিলাক দিয়ে থাকেন। সেক্ষেত্রে প্যাকেটের গায়ে পরিমাপ দেয়াই থাকে, সেভাবে বানিয়ে দিতে পারেন। কিন্তু বাজারের জিনিস না দেয়াটাই ভালো হয়। যদি সে খেতে পছন্দ করে তবে শুধু সুজি বা সুজির সাথে বিভিন্ন ফলের টুকরা মিশিয়ে জ্বাল দিয়ে খাওাতে পারেন। অল্প চিনিও দিতে পারেন স্বাদের জন্য। বাচ্চার ৬ থেকে ৮ মাসের মধ্যে ধীরে ধীরে নতুন নতুন জিনিস তার খাবারে যুক্ত করতে হবে। আয়রন যুক্ত খাবার বেশি দেয়ার চেষ্টা করবেন। দিতে পারেন কলা। বিভিন্ন ফলের জুস দিতে পারেন। তবে দোকানের জুস দিতে যাবেন না কিছুতেই। এবং গরুর দুধ আমাদের জন্য উপকারি হলেও বাচ্চার জন্য একদম নয়, তাই ১ বছরের আগে কিছুতেই গরুর দুধ দেয়া যাবেনা। বাচ্চার ৮ মাসের দিকে তাকে কিছুটা শক্ত খাবারে অভ্যস্ত করাবেন। যেন সে চিবানো শিখতে পারে। সে চিবিয়ে খেতে পারবে এভাবে সবজির পিউরি করে দিতে পারেন। কলা হাত দিয়ে চটকিয়ে খাওাতেও পারেন। আর একটা জিনিস খাওয়ানোর চেষ্টা করতে পারেন তা হল পাস্তুরিত চীজ বা দই। বাসায় দই তৈরি করতে পারলে ভালো হয়। তবে বাচ্চা সহ্য করতে না পারলে দরকার নেই। তবে অল্প অল্প প্রোটিন যুক্ত খাবার যেমন মাছ মাংস দিতে পারেন।

 

☆ দিনে কতটুকু খাবার দিতে হবে-

বাচ্চাকে একবারে অনেক খাবার এক সাথে দিয়ে দিবেন এবং সে খেয়ে ফেলবে এটা ভাবা ঠিক নয়। আমাদের খাবারের চাহিদা এবং বাচ্চার খাবারের চাহিদা কিন্তু এক নয়। আবার সে যেন সুষম খাবার পায় সেটাও খেয়াল রাখতে হবে। তাই এমনভাবে খাবার দিতে চেষ্টা করবেন যেন তার পুষ্টির চাহিদা পূরণ হয়। খিচুরিটা বলা হয় বাচ্চার জন্য পরিপূরক একটি খাবার। তাই দিনে ১/৩ কাপ থেকে১/২ কাপ খিচুড়ি দেয়া যেতে পারে। সুজির হালুয়া দিতে পারেন ১/৪ থেকে ১/২ কাপ। সবজি পিউরি ১/৪ থেকে ১/৩ কাপ আর ফলের জুস করে, চটকে বা সুজিতেও মিশিয়ে দিতে পারেন ১/৪ থেকে ১/২ কাপ। সবজি টা কম দেয়ার কারন হল খিচুড়িতে এমনিতেই কিছু সবজি দেয়া হয়। দুধের বাইরে যদি কোন ডেইরী প্রোডাক্ট দিতে চান তবে ১/৮ থেকে ১/৪ কাপ দিতে পারেন। আর প্রোটিন যুক্ত খাবার যেমন মাছ মাংস দিতে পারেন ১/৮ কাপ থেকে ১/৪ কাপ। এটা খিচুড়িতে মিশিয়ে দিতে পারেন বা আলাদাও দিতে পারেন। মনে রাখবেন বাচ্চা ছোট হলেও তার নিজস্ব পছন্দ অপছন্দ থাকতে পারে খাবারের ব্যাপারে। খাবার সুস্বাদু না হলে আমাদের যেমন খাবার প্রতি আগ্রহ কমে যায় বাচ্চার জন্যও কিন্তু ব্যাপারটা একই। তাই পুস্তিকর খাবার যেন সুস্বাদু হয় তা খেয়াল রাখবেন। এ জন্য দরকার মত অল্প লবন বা চিনি দিতে পারেন। তবে মসলা দিতে যাবেন না। কোন খাবার দেয়ার পরে ২ দিন অপেক্ষা করবেন তার এলার্জির কোন সমস্যা আছে কিনা জানার জন্য। আপনি যা দিবেন, সেটা আপনার বাচ্চা একবারে সব খেতে পারবে তা কিন্তু নয়। জোর করবেন না। দরকার পড়লে অল্প অল্প করে বারবার খেতে দিন। খাবার বেঁচে গেলে পরের দিনের জন্য রেখে দিবেন না। বাসি খাবার বাচ্চার জন্য স্বাস্থ্যকর নয়। অনেক ক্ষেত্রেই নতুন খাবার শুরু করার পরে বাচ্চার পাতলা পায়খানা হতে পারে বা পায়খানা কষে যেতে পারে। সেক্ষেত্রে ডাক্তারের পরামর্শ নিন।

 

সবথেকে দরকারি হল আপনি আপনার সন্তানকে যেটাই খেতে দিন না কেন আগে বাচ্চার ডাক্তারের সাথে পরামর্শ করে নেবেন। দরকারি মনে করলে তার কাছ থেকে বাচ্চার জন্য খাবার চার্ট করে আনবেন। আর এখন যেহেতু গরমের দিন তাই বাচ্চাকে পানি খাওয়াবেন একটু পরপর। বাচ্চাদের খাবার নিয়ে তাই আর ভয় নেই। একটু কষ্ট করে ঠিক মত পুষ্টিকর খাবার খাওয়ালেই দেখবেন আপনার সন্তান সুস্থ ও সুন্দরভাবে বেড়ে উঠবে।