ঘরজুড়ে নানারকম খেলনা, অথচ আপনার আদরের শিশুটি সেসব ছুঁয়েও দেখছে না। কেন? রঙিন বস্তু, নানান রকমের খেলনার প্রতি শিশুদের আকর্ষণ থাকে সবচাইতে বেশি। তারপরও কেন খেলনা আর খেলাধুলোর প্রতি আপনার শিশুর এতো অনীহা? বিশেষজ্ঞদের মতে, মোট পাঁচটি সম্ভাব্য কারণে এমনটা ঘটতে পারে। সেগুলো হলো-
১। খেলনাগুলো আপনার শিশুকে আনন্দ প্রদান করছে না
শুনতে খুব সহজ মনে হলেও বাস্তবে ব্যাপারটি একটু জটিল। খেলনা মানেই যে শিশু সেটাতে আগ্রহী হবে তা কিন্তু নয়। আমরা ভেবে থাকি, সদ্য হাত মুঠ করতে শেখা একটি শিশু ঝুনঝুনি দিয়ে খেলতে চাইবে। কিন্তু শিশু কোন জিনিসটির প্রতি আগ্রহী হবে তা সম্পূর্ণ নির্ভর করে তার আগ্রহ এবং মানসিক উৎকর্ষতার উপরে। খেলনা শিশুর বিনোদন নয়। বরং শিশু অনেকগুলো বিনোদনের মাধ্যমের মধ্যে থেকে খেলনাকে বেছে নেয়। আপনার শিশুটু হয়তো অন্য কোন খেলনায় আগ্রহী। খেলনার চাইতে তার ভালোলাগা হয়তো অক্ষরে বেশি। তাই চিন্তিত না হয়ে বা খেলনা দিয়ে খেলার জন্য শিশুকে জোর না করে তার পছন্দের আনন্দের উৎসটি খুঁজে বের করুন।
২। অতিরিক্ত খেলনা
ছোট্ট সোনামণির জন্য হয়তো আপনি অনেক অনেক খেলনা কিনে ফেলেছেন। কিন্তু কখনো কি ভেবছেন যে, আপনাকে যদি একইসাথে ১০টি কম্পিউটার দিয়ে দেওয়া হতো তাহলে আপনি আসলেই কাজ করতে আগ্রহ বোধ করতেন কিনা? কোন জিনিসের অতিরিক্ত প্রাপ্যতা সেটার প্রতি আমাদের ভালোলাগা ও মনোযোগ কমিয়ে দেয়। তাই শিশুকে অনেক বেশি খেলনা না দিয়ে কয়েকটি খেলনার মাধ্যমে খেলতে দিন। এতে করে অনেক বেশি খেলনার কারণে শিশু দ্বিধা বা অনীহায় ভুগবে না।
৩। শিশুর পরনির্ভরতা
সন্তানের জন্য সেরাটাই আপনি চাইবেন সেটাই স্বাভাবিক। তার প্রতিটি কাজে সাহায্য করা, তাকে কথা বলতে শেখানো, তার খেলনা ধরার সময়গুলোতে পাশে থাকা- এই সবগুলো কাজই হয়তো আপনি করছেন। কিন্তু, এসব ভালো ব্যাপারগুলোর পেছনে নিজের অজান্তেই আপনার শিশুকে আপনার প্রতি অতিরিক্ত নির্ভরশীল করে ফেলছেন না তো? অনেকসময় শিশুরা নিজের কাজগুলো করার ক্ষেত্রে অন্যদের উপরে এতো বেশি নির্ভরশীল হয়ে পড়ে যে, খেলনা দিয়ে খেলার ক্ষেত্রেও তারা অন্যদের সাহায্যই আশা করে থাকে। এতে করে তারা নিজেরা খেলতে আগ্রহী না হয়ে অন্যদের খেলা দেখতেই স্বাচ্ছন্দ্য বোধ করে।
৪। খেলনার একঘেয়েমি
একই খেলনা দিয়ে সবসময় খেলতে কারই বা আর ভালো লাগে। হয়তো আপনার শিশুটিও নিজের চেনা পরিচিত খেলনাগুলো দিয়ে খেলার আগ্রহ হারিয়ে ফেলেছে। তাহলে এখন উপায়? নতুন খেলনা কিনবেন শিশুর জন্য? উঁহু! বরং, শিশুর যে খেলনাগুলো তার কাছে পুরনো হয়ে গিয়েছে সেগুলোকে কোথাও লুকিয়ে রাখুন কয়েকদিনের জন্য। তাকে অন্য খেলনা দিয়ে খেলতে দিন। কয়েক সপ্তাহ পর আবার পুরনো সেই খেলনাগুলো শিশুর সামনে রাখুন। দেখবেন, পুরনো খেলনাতেই আবার আগ্রহী হচ্ছে সে।
৫। খেলনার অবস্থান
অনেকসময় সহজভাবে বলতে গেলে শিশু বুঝে উঠতে পারে না যে সে খেলনা দিয়ে কী করবে। আরো ভালোভাবে বলতে গেলে, শিশুর খেলনাগুলো যদি এমনভাবে আপনি রাখেন যেটা তার কাছে আকর্ষণীয় কিছু বলে মনে হচ্ছে না, তাহলে সে খেলতে আগ্রহী হবে কেন? সেক্ষেত্রে একটু ভাবুন খেলনাগুলোকে কিভাবে সাজিয়ে তোলা যায়। শিশুকে এই সমস্যার সমাধান প্রদান করতে তারর খেলনাগুলো এমনভাবে সাজিয়ে রাখুন যেন চলাফেরার পথে খেলনাগুলো শিশুর মনোযোগ আকর্ষণ করে। ব্যস! দেখবেন, আপনার শিশু এবার আর খেলা দিয়ে না খেলে পারবেই না!
শিশু তার খেলনা দিয়ে খেলতে চাইছে না, তার মানে এই নয় যে আপনার শিশু অস্বাভাবিক কোন আচরণ করছে। চারপাশের পরিস্থিতি বিবেচনায় এবং শিশুর মানসিক উৎকর্ষতার উপর নির্ভর করে খেলনার প্রতি শিশুর আগ্রহ বাড়তে বা কমতেই পারে। তাকে সময় দিন, নতুনভাবে তাকে খেলায় আগ্রহী করে তুলুন। আর যদি সে খেলনা দিয়ে খেলতে না-ই চাই তাতেই বা কী! বরং শিশু যে কাজের মাধ্যমে আনন্দ পাচ্ছে সেটা করতেই তাকে উৎসাহ দিন!