শিশুদের মৌলিক চাহিদা ব্যতিত সর্বপ্রথম যে চাহিদার সৃষ্টি হয় সেটি খেলনার জন্য। এবং প্রতিটি শিশুর জীবনে এই খেলনার এক বিশেষ প্রভাব ফেলে। তাই শিশুর হাতে যে কোনো খেলনা তুলে দেবার আগে আমাদের সতর্ক হতে হবে। তাই এই বিষয়টির সম্পর্কে জানা আমাদের জন্য একান্ত প্রয়োজন।
☆শিশুর উপর খেলনার প্রভাবঃ
শিশুদের ছোটবেলার সবচেয়ে কাছের সঙ্গী হয়ে থাকে খেলনা। একটি শিশুর মানসিকতার উপরে খেলনা বিভিন্নভাবে প্রভাব ফেলতে পারে। এ সম্পর্কে জেনে নিন-
▪ব্যক্তিত্ব– খেলনার ধরণ শিশুর মানসিকতায় প্রভাব ফেলে। শিশু বড় হতে থাকলে শিশুর ব্যক্তিত্বে তার ছাপ পড়ে।
▪মানসিক বিকাশ– শিশুর বুদ্ধি বিকাশে খেলনা গুরুত্বপূর্ণ ভুমিকা পালন করে। বিভিন্ন ব্রেইন বুস্টিং খেলা (লুডু,দাবা, পাজল গেম, কিউব) শিশুর মানসিক বিকাশে প্রভাব ফেলে।
▪শিশুর পছন্দ– একটি শিশুর জীবনে প্রথম পছন্দ করে কেনা উপকরণ তার খেলনা। খেলনার বিষয়ে তাই শিশুদের আবেগ কাজ করে। খেলনা কেনার সময় নিজের পছন্দের চেয়েও শিশুর পছন্দকে বেশি গুরুত্ব দিন।
☆শিশুদের পছন্দের কিছু বহুল প্রচলিত খেলনা–
কিছু প্রচলিত খেলনা রয়েছে যা বাবা-মায়েরা তেমন চিন্তা ছাড়াই শিশুর হাতে তুলে দেন। অথচ এসকল খেলনার রয়েছে কিছু মারাত্মক ক্ষতিকর দিক।
◆লেগোঃ শিশুদের সবচেয়ে পছন্দের খেলনার একটি হলো লেগো। আকারে ছোট হলে অনেক সময় মুখে ঢুকিয়ে ফেলে যা শিশুর গলায় আটকে ভয়াবহ পরিস্থিতি সৃষ্টি হতে পারে।
◆খেলনা বন্দুকঃ অনেক সময় খেলনা বন্দুক দিয়ে খেলতে গিয়ে আহত হতে পারে শিশুরা। পাশাপাশি এমন খেলনা মানসিকভাবেও শিশুর উপর নেতিবাচক প্রভাব ফেলে।
◆ক্যামেরা/মোবাইল ফোনঃ অনেক সময়েই শিশুকে শান্ত করার জন্যে বাবা-মা ছোটবেলাতেই শিশুদের হাতে স্মার্টফোন, ট্যাব বা প্যাড তুলে দেয়। এতে করে শিশু অল্প বয়সেই এসব ডিভাইসের প্রতি আসক্ত হয়ে পড়ে। এর ফলে শিশুরা সৃজনশীলতার থেকে পিছিয়ে পরে এবং অসল স্বভাবের হয়ে উঠে।
◆রিমোট কন্ট্রোল গাড়ি: বর্তমানে খেলনা গাড়ি তৈরির উপাদান হিসেবে ব্যবহার হয় ধাতব পদার্থ যা শিশুর জন্যে ক্ষতিকর।
◆বারবি পুতুলঃ বিভিন্ন রকম খেলনা পুতুল শিশুদের মনে প্রভাব ফেলে। এতে কল্পনার জগতে শিশুরা এমনভাবে বাস করতে শুরু করে বাস্তব জীবনের অনেক কিছুই তার চোখে পড়ে না। যার প্রতিফলন শিশুর ভবিষ্যৎ জীবনে দেখা যায়।
◆অ্যাকশন ফিগারঃ কার্টুন ও কমিকের মাধ্যমে শিশুরা বিভিন্ন অ্যাকশন ফিগারের সাথে পরিচিত হয়ে ওঠে। কিন্তু কল্পনার জগত থেকে উঠে আসা চরিত্র (স্পাইডার ম্যান, সুপার ম্যান, ব্যাট ম্যান) অনেক সময়েই শিশুদের আচরণে নেতিবাচক প্রভাব ফেলে।
◆ব্যাটারি যুক্ত খেলনা– ব্যাটারিযুক্ত খেলনা ছোটদের বেশ প্রিয় হয়। এসব খেলনায় আলো জ্বলে, আওয়াজ হয়; যা শিশুরা পছন্দ করে থাকে। আলো জ্বলা এমন খেলনার জন্যে ব্যবহৃত হয় খুদে ব্যাটারি যা শিশুরা খেলাচ্ছলে নিজের নাকের ভেতর ঢুকিয়ে ফেলে। ক্ষারযুক্ত এমন ব্যাটারি বের করা হলেও রাসায়নিক বিষক্রিয়ার ফলে যে ক্ষতি হয়ে যায় তাতে শিশুর ঘ্রাণশক্তি সারাজীবনের জন্যে ক্ষতিগ্রস্ত হয়।
খেলতে খেলতেই শিশু শিখে। খেলনা শিশুর বুদ্ধির বিকাশে ভূমিকা রাখে তাই শিশুর জন্যে সৃজনশীল খেলনা কিনতে হবে। তাই, শিশুদের হাতে এমন খেলনা তুলে দেওয়া উচিত যা আনন্দ দেওয়ার পাশাপাশি মানসিক বিকাশেও সাহায্য করে। এক্ষেত্রে বয়সের সাথে খেলনার ধরনের বিশেষ যোগসূত্র রয়েছে।
☆শিশুর জন্যে বয়স উপযোগী খেলনা-
বয়সউপযোগী খেলনা:
◆০-১শিশুদের জন্যে হাতের আঁকার অনুযায়ী খেলনা গাড়ি বা রঙচঙা বই, ফোম বা প্লাস্টিকের বিল্ডিং সেট কিনে দিন। কেনার পূর্বে অবশ্যই খেলনার বয়সসীমা দেখে নিন। এ বয়সে শিশুকে রঙিন খেলনা তুলে দিন, তাতে করে শিশুর রঙের বিষয়ে ধারণা জন্মাবে।
◆১-৩ধীরে ধীরে শিশু বড় হতে থাকে। এ বয়সে বল, পুতুল, লেগো সেট শিশুর জন্যে উপযুক্ত খেলনা। পাশাপাশি শিশুর মানসিক বিকাশের জন্যে রঙ পেন্সিল ও ক্রেয়ন তুলে দিন। এ বয়সে শিশুদের ছবি আঁকার প্রতি আগ্রহ জন্ম নেয়।
◆৩-৫দলীয় খেলার প্রতি শিশুকে আগ্রহী করে তুলতে এ বয়সে প্লাস্টিকের ক্রিকেট সেট বা ফুটবল দেওয়া উচিত। এর সাথে বিভিন্ন রকম পাজল সেট দেওয়া যায় যা শিশুর বুদ্ধির বিকাশে ভূমিকা রাখে।
শিশুরা কিছুটা বড় হবার পর বাড়ির সামনের মাঠে বা খোলা ময়দানে গিয়ে অন্যান্য শিশুদের সাথে খেলতে যেতে আগ্রহী করে তুলুন। ফুটবল, ক্রিকেট, ব্যাডমিন্টন এইসব খেলা মাঠে গিয়ে খেলার ফলে শিশুদের যেমন নতুন নতুন বন্ধু তৈরি হয় তেমনি তারা সামাজিক হয়ে উঠে। আবার এইসব খেলা শিশুদের শারীরিক ও মানসিক বিকাশেও বিশেষ সহায়তা করে। শিশুদের সৃজনশীল ও স্বাস্থ্যকর করে তোলে। সবার সাথে বাইরে খেলতে যাবার ফলে তারা নিজেদের সমস্যা নিজের থেকে সমাধান করতে শিখে। নিজের থেকে সিদ্ধান্ত নিতে শিখে। যা ভবিষ্যতে অনেক ক্ষেত্রেই শিশুদের উপকারে আসে।