"শিশুর ঘ্রাণের ক্রমবিকাশ কীভাবে ঘটে?"

"শিশুর ঘ্রাণের ক্রমবিকাশ কীভাবে ঘটে?"

গর্ভকালীন সময় থেকেই শিশুর ঘ্রাণ শক্তির ক্রমবিকাশ ঘটা শুরু হয়ে যায়। শিশুর বয়স আট বছর হওয়া পর্যন্ত এই বিকাশ সাধন হয়ে থাকে। আসুন এই সম্পর্কে জেনে নেয়া যাক-

 

☆ শিশুর ঘ্রাণ শক্তির ক্রমবিকাশ-

 ◆ নবজাতক :

 

একটি শিশু পরিপূর্ণ ঘ্রাণ শক্তি নিয়েই জন্মগ্রহণ করে। খুব দ্রুতই তারা মায়ের ঘ্রাণ চিনে ফেলে এবং স্বাভাবিক ভাবেই ক্ষুধার্ত অবস্থায় বুকের দুধ খাওয়ার জন্য মায়ের দিকেই মুখ ঘুরিয়ে রাখে। এমনকি একটি নবজাতক শিশু তার মায়ের বুকের দুধ ও অন্যের বুকের দুধের ঘ্রাণের মধ্যেও পার্থক্য করতে পারে।

 

◆ এক মাস বয়সী শিশু :

এই বয়সী শিশুরা সব ধরনের ঘ্রাণ পাওয়ার পাশাপাশি যে কোনো তীব্র ঘ্রাণের প্রতি কিছুটা সংবেদনশীল হয়। আপনি একটু খেয়াল করলেই দেখতে পারবেন, যদি কোনো পারফিউম দেয়া অবস্থায় শিশুকে বুকের দুধ খাওয়াতে যান তাহলে অন্য দিনের তুলনায় বেশ কিছুটা কম খাচ্ছে।

 

◆ তিন মাস বয়সী শিশু :

এই বয়সে শিশু আশেপাশের বিভিন্ন মানুষের উপস্থিতি সম্পর্কে বুঝতে পারে ঘ্রাণ শক্তির মাধ্যমে। এমনকি এই ঘ্রাণ শক্তি দিয়েই বুঝতে পারে যে আশেপাশে থাকা ব‍্যক্তি কি তার পরিচিত নাকি অপরিচিত। যদি কোনো মানুষের অপরিচিত ঘ্রাণের কারণে সে ভয় পায় তাহলে দেখা যাবে বাচ্চাটি কাঁদছে বা হাত পা ছুড়ছে।

 

◆ ছয় মাস বয়সী শিশু :

এই বয়সে সাধারণত শিশুদের মায়ের দুধের পাশাপাশি অন্যান্য খাবার দেয়া হয়ে থাকে। আগেই বলা হয়েছে খাবারের স্বাদেরসাথে ঘ্রাণশক্তির একটি প্রত‍্যক্ষ সম্পৃক্ততা রয়েছে। এই বয়সী শিশুরা ঘ্রাণের মাধ্যমেও অনেকেটা সিদ্ধান্ত নেয় যে তার কাছে খাবারটি পছন্দ হচ্ছে কিনা। লক্ষ্য করলে দেখতে পারবেন যদি শিশুটির কাছে খাবারের ঘ্রাণ পছন্দ হয় তাহলে সে হাসছে বা খাবারের দিকে আঙ্গুল নির্দেশ করতে পারে বা শব্দ করতে পারে।

আর একটু খেয়াল করলেই দেখতে পারবেন শিশুর ঘ্রাণশক্তির পছন্দ অপছন্দের বিষয়েগুলো আপনার সাথে অনেকটাই মিলে যাচ্ছে। কারণ গর্ভকালীন সময়ে আপনি যে খাবারগুলো খেতেন শিশুও গর্ভে এমনিওটিক তরলের মাধ্যমে সেই খাবার গুলোর ঘ্রাণ পেত।

 

◆ বারো মাস বয়সী শিশু :

দশ থেকে বারো মাস বয়সের দিকে শিশুদের বিভিন্ন ধরনের খাবারের প্রতি আগ্রহ কমে যায়। এই সময়ে তার ঘ্রাণশক্তি খাবারের পছন্দ ও অপছন্দ করার ব‍্যাপারে সাহায্য করে। খাবারের ঘ্রাণ যদি শিশুর পছন্দ না হয় তাহলে শিশু সেটা ঠিকই জানিয়ে দিবে।

 বয়স বৃদ্ধির সাথে সাথে শিশু নিত্য নতুন ঘ্রাণের সাথে পরিচিতি লাভ করে এবং নতুন নতুন অভিজ্ঞতা হয়। প্রায় আট বছর পর্যন্ত এই বিকাশ ঘটে থাকে এবং বিভিন্ন পরিস্থিতিতে বিভিন্ন ধরনের পরিবর্তন সাধন হয়ে থাকে। সময়ের সাথে সাথে এই ক্ষেত্রেও শিশু পরিপক্বতা অর্জন করে।

 

 

সদ‍্যোজাত শিশুর ঘ্রাণ শক্তির ক্ষমতা বেশ প্রখর হয়। তারা পরিচিত বা সুন্দর কোনো ঘ্রাণ পেলে যেমন শান্ত হয়ে থাকে তেমনি কটু কোনো গন্ধে সে নাক সরিয়ে নেয়। নাক শুধুমাত্র এই ঘ্রাণ নিতেই সহায়তা করে না। এই ঘ্রাণের সাথে স্বাদেরও এক বিশাল সংযোগ রয়েছে। বয়স বৃদ্ধির সাথে সাথে এর ধরনের পরিবর্তন ঘটতে থাকে। শিশুরা যে খাবারের ঘ্রাণ পছন্দ করে সে খাবারের প্রতিও তার আগ্রহ বেড়ে যায়। এজন্য শিশুদের বিভিন্ন ধরনের খাবারের ঘ্রাণ নিতে দিতে হবে।যাতে সে বিভিন্ন ধরনের খাবারের প্রতি আগ্রহী হয়ে উঠে। বিশেষত বিভিন্ন ধরনের শাক সবজি ও ফল ফলাদির ঘ্রাণের সাথে পরিচিতি লাভ করাতে হবে। শিশুর সঠিক গঠন ও বিকাশের ক্ষেত্রে এ সকল খাবার বিশেষ গুরুত্বপূর্ণ। তাই যতো বেশি সম্ভব এই সকল খাবারের প্রতি শিশুর আগ্রহ সৃষ্টি করতে হবে। আমাদের এই বিষয়টির উপরও বিশেষ নজর দিতে হবে এবং এর বিকাশে যথাসম্ভব সহায়তা করতে হবে।