সদ্য জন্ম নেয়া নবজাতক শিশু কোনো জ্ঞান নিয়ে জন্মগ্রহণ করে না। কিন্তু জন্মের সময় থেকেই আমরা পাঁচটি বিশেষ অনুভূতি নিয়ে জন্মগ্রহণ করে থাকি। এদের পঞ্চ ইন্দ্রিয় বলা হয়। সেসকল ইন্দ্রিয় গুলো হচ্ছে চোখ, নাক, কান, জিভ ও ত্বক। আজ আমরা আমাদের অন্যতম একটি ইন্দ্রিয় নাক এর কার্যকারিতা সম্পর্কে আলোচনা করবো।
নাকের মূল কাজ হচ্ছে শ্বাস প্রশ্বাস নিতে সাহায্য করা। এছাড়াও নাকের আরেকটি খুব গুরুত্বপূর্ণ কাজ আছে, সেটি হচ্ছে ঘ্রাণ নিতে সাহায্য করা। শিশুর স্বাভাবিক বৃদ্ধিতে তার ঘ্রানশক্তি খুব গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে। শিশুর স্বাদ গ্রহণের ক্ষমতার সাথে ঘ্রান শক্তির জোরালো একটি সম্পর্ক রয়েছে। তাই শিশু কি খাবে আর কি খাবে না তার উপর ঘ্রানশক্তির প্রভাব যথেষ্ট পরিমাণে বিদ্যমান। এছাড়াও শিশুর আবেগের সাথে তার ঘ্রাণশক্তির সম্পর্কটাও চমৎকার এবং তা তার মানসিক বন্ধন প্রক্রিয়াতেও গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখে।
☆ শিশুর ঘ্রানশক্তি কখন থেকে বিকশিত হতে শুরু করে -
গর্ভকালীন সময়ের প্রথম ট্রাইমেস্টার থেকেই শিশুর নাক গঠন শুরু হয়। এছাড়া দশ সপ্তাহের মধ্যেই রিসিপটর্স নামক যে অংশটি দিয়ে শিশু ঘ্রাণ পেয়ে থাকে সেটিও গঠিত হওয়া শুরু করে। নাকের মধ্যকার অলফ্যাকটরি রিসিপটর্স নামক এই অংশটি দিয়ে শিশু যে কোনো ঘ্রাণ সম্পর্কে বুঝতে পারে এবং এই অংশটিই শিশুর মস্তিষ্কে যে কোনো ঘ্রাণ সম্পর্কে জানিয়ে থাকে। ঘ্রাণশক্তি এতো দ্রুত বিকশিত হতে থাকে যে শিশু গর্ভকালীন অবস্থাতেই ঘ্রাণ পাওয়া শুরু করে।
মায়ের গর্ভে থাকাকালীন সময় থেকেই শিশু ঘ্রাণশক্তি ব্যবহার করা শুরু করে। এই অবস্থায় শিশু যখন শ্বাস প্রশ্বাস এবং মুখের মাধ্যমে এমনিওটিক তরল পদার্থ গ্রহণ করতে থাকে তখন তারা এই তরলটির ঘ্রাণও পেয়ে থাকে।
এই এমনিওটিক তরলের ঘ্রাণের সাথে মায়ের বুকের দুধের বেশ মিল রয়েছে, যা শিশুকে জন্মের পর বুকের দুধ খাওয়ার জন্য সহায়তা করে থাকে। এছাড়া গর্ভকালীন সময়ে আপনি যে খাবার খেয়ে থাকেন এই এমনিওটিক তরলের মাধ্যমে শিশু প্রতিনিয়ত সেগুলোর ঘ্রাণও পেয়ে থাকে।
নবজাতক শিশু জন্মের পর থেকেই প্রাকৃতিক ভাবেই বুকের দুধের ঘ্রাণের প্রতি আকৃষ্ট হয়ে থাকে। যার ফলে সে বুকের দুধ খাওয়ার ব্যাপারেও বেশ উৎসাহী হয়। নবজাতকের পরিচিত ঘ্রাণ তাকে শান্ত হতে সাহায্য করে। তার প্রিয় কোনো কম্বল যাতে মায়ের ঘ্রাণ বা তার শরীরে ব্যবহার করা লোশনের ঘ্রাণ থাকে এমন কিছু তাকে অশান্ত সময়ে শান্ত করার জন্য বেশ কার্যকরী।
মস্তিষ্কের যে অংশটি ঘ্রাণ শক্তি নিয়ে কাজ করে ঠিক সে অংশটিই স্মৃতি শক্তি নিয়েও কাজ করে থাকে। যার ফলে শিশু ঘ্রাণের সাথে তার অভিজ্ঞতাগুলোকেও সম্পৃক্ত করে রাখে। ফলাফল স্বরূপ দেখা যায় যে কোনো একটি নির্দিষ্ট ঘ্রাণ পেলে তার সাথে সম্পৃক্ত কোনো অভিজ্ঞতাও শিশুর মনে পড়ে যেতে পারে। এজন্যই শিশুকে যখন নতুন কোনো ঘ্রাণের সাথে পরিচয় করানো হয় সাথে সাথে সে জিনিসটির নাম পরিচয় ও অন্যান্য কার্যকারিতা সম্পর্কে জানানো উচিত।
অঙ্গ সঞ্চালনের বিকাশের ক্ষেত্রে ইন্দ্রিয়ের বিকাশ অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। ইন্দ্রিয় ও অঙ্গ সঞ্চালন নার্ভাস সিস্টেমের সাথে মৌলিক সংযোগ রয়েছে। যা একটি শিশুর সার্বিক বিকাশকে খুব বেশি প্রভাবিত করে। মানুষের বয়স বৃদ্ধির সাথে সাথে ইন্দ্রিয়ের ক্ষমতা ও ধারণার বিভিন্ন পরিবর্তন হতে থাকে। তবে এই পরিবর্তন নির্ভর করে শিশুর জৈবিক চাহিদা পূরণ, তার চারপাশের পরিবেশ এবং শিশুর ব্রেনের বিকাশ ও দক্ষতার উপর। অতি শৈশবে শিশুরা তাদের অভিজ্ঞতা সবার কাছে বর্ণনা করতে পারে না। তবে অনেক non verbal response দ্বারা শিশুর আচরণ বোঝা যায়। ঘ্রাণ শক্তির ক্ষেত্রটিতেও শিশুর ভালো লাগা বা খারাপ লাগা তার বিভিন্ন অঙ্গ ভঙ্গির মাধ্যমেই বোঝা যায়।