"আজকের শিশু আগামী দিনের ভবিষ্যৎ "- এই কথাটির সাথে আমরা সবাই কম বেশি পরিচিত।সেই ভবিষ্যতের প্রতি আমরা কতটা যত্নশীল তা কি কখনো ভেবে দেখেছি?
আমরা সবাই জানি জন্মলগ্ন থেকে একটি শিশুকে তার পরিবার আদর যত্ন সহকারে লালন পালন করে থাকেন। কিন্তু বয়স বৃদ্ধির সাথে সাথে একটি শিশুর শুধু মাত্র শারীরিক বৃদ্ধি সাধন হয় না মানসিক বিকাশ ও ঘটে থাকে। সেই মানসিক বিকাশ সাধনের প্রতি আমরা কতটা যত্নশীল? আমাকে যদি এই প্রশ্নটি করা হয় তবে আমি বলব আমাদের মতো দেশে যেখানে সকল শিশুদের সাধারণ মৌলিক অধিকারগূলো পূরণ করা সম্ভব হয় না সেখানে এই মানসিক বিকাশের প্রতি বিশেষ যত্ন আশা করাটা অনেকটাই বিলাসি মনোভাবের সাপেক্ষ।
Favoritism - ইংরেজি একটি শব্দ,যার বাংলা আভিধানিক অর্থ পক্ষপাত। সাধারণ ভাবে পক্ষপাত বলতে আমরা যা বুঝি তা হলো সবসময় যেকোন নির্দিষ্ট একটি পক্ষকে সমর্থন করা। সে পক্ষটি কোনো কিছু সঠিক করুক বা ভুল করুক সবসময় সে ব্যক্তি বা দলের হয়ে পক্ষপাতিত্ব করা। উদাহরণস্বরূপ বলা যায় সকল খেলাপ্রেমিক সবসময় যেকোনো একটি নির্দিষ্ট দলকে অথবা খেলোয়াড়কে সমর্থন করে থাকেন। সে দলটি অথবা খেলোয়ারটি যদি কোন ম্যাচে খারাপ খেলে থাকেন সেটির উপর নির্ভর করে কেউ কিন্তু রাতারাতি সমর্থন করা ছেড়ে দিবেন না। বরং লক্ষ্য করা যায় সে পক্ষটির দ্বারা কোন ভুল সংঘটিত হয়ে থাকলেও তার সমর্থনকারীরা সেটি সহজে মেনে নিতে চান না। এটি মানুষের সাধারণ একটি বৈশিষ্ট্য।
এই পক্ষপাত বিষয়টি একটি শিশুর মানসিক বিকাশে বিশাল প্রভাব ফেলে। এবং অধিকাংশ ক্ষেত্রেই প্রভাবটি নেতিবাচক হয়ে থাকে। যা শিশুটির মানসিক বিকাশে বিশাল ব্যাঘাত ঘটিয়ে থাকে। এর ফলে শিশুটির উপর যে নেতিবাচক প্রভাব সেটি শুধুমাত্র যে ছেলেবেলা পযর্ন্তই সীমাবদ্ধ থাকে তা কিন্তু নয়। বরং বয়স বৃদ্ধির সাথে সাথে এর ভয়াবহতাও বৃদ্ধি পেতে থাকে।
অনেকেই বলতে পারেন পরিবারের মাঝে পক্ষপাতিত্ব ঘটা এইসব মনের ভুল অথবা ছেলেমানুষী কথাবার্তা। এমন কিছুই ঘটা সম্ভব না। বাবা-মায়ের চোখে সকল সন্তানই সমান। তাদের জন্য আমার পক্ষ থেকে একটিমাত্র পরামর্শ। বতর্মান যুগ তো ইন্টারনেটের যুগ। কষ্ট করে না হয় একটু ঘাটিয়ে দেখবেন। তাহলেই আমার কথার সত্যতা যাচাই করতে পারবেন। শুধুমাত্র এই সামান্য একটু ভেদাভেদ এর জের ধরেই পরবর্তীতে কতো সমস্যা সৃষ্টি হয় এবং অনেক ভালো পরিবারের সন্তান হয়েও কতো অবুঝ সন্তানের জীবন বিপথগামী হয়েছে।
এই বিষয়টি অনেকের কাছেই তুচ্ছ মনে হতে পারে কিন্তু এই তুচ্ছ বিষয়টির জের ধরেই অনেক সন্তান জেদের বশে অচিরেই নিজেদের জীবন শেষ করে ফেলে। এমনকি অধিকাংশ ক্ষেত্রে ভালো বা স্বচ্ছল পরিবারের সন্তানরা এই কারণবশত হতাশাগ্রস্থ হয়ে মাদকের পথ বেছে নেয়। নিজের পরিবার অনেকক্ষেত্রে বন্ধুবান্ধব ও অন্যান্য সকলের থেকেই নিজেকে গুটিয়ে নেয়। যার ফলস্বরূপ পরবর্তীতে এইসব অঘটন ঘটে থাকে।
এই পক্ষপাতিত্ব বা এর নেতিবাচক প্রভাব যে শুধুমাত্র আমাদের দেশেই ঘটে থাকে তা নয়। বড় বড় উন্নত দেশগুলোতেও এটি লক্ষ্যনীয়। জন্মগতভাবে কিন্তু কখনোই কোনো ভাই-বোন সম্পর্ক খারাপ হয় না। এক্ষেত্রেও এই পক্ষপাত বিশেষ ভূমিকা পালন করে। যার ফলস্বরূপ একসময় সেই সন্তানটি তার ভাই- বোন এর সাথে অনেকক্ষেত্রে তার বাবা- মায়ের সাথেও সম্পর্ক বিচ্ছিন্ন করে ফেলে।
এইসব বলে কাউকে ভয় দেখানো কিন্তু আমার উদ্দেশ্য নয়। অথবা আমি এটাও বলছি না যে সন্তানকে শাসন করা যাবে না। ভালো মানুষ হিসেবে গড়ে তোলার জন্য আদরের সাথে শাসনের ও প্রয়োজন। কিন্তু শাসন হতে হবে সঠিক কারণে, সঠিক উপায়ে এবং সকল সন্তানের জন্য তা হতে হবে সমান। শুধুমাত্র শারীরিক নয় সাথে সঠিক মানসিক বিকাশও প্রয়োজন। এর মাধ্যমেই একটি শিশুর উজ্জ্বল ভবিষ্যৎ গড়ে তোলা সম্ভব। এবং জাতির ভবিষ্যতকে উজ্জ্বল করে তোলার মাধ্যমে দেশের ভবিষ্যতকেও সুরক্ষিত করে তোলা সম্ভব। তাই আমাদের সকলের উচিত শিশুদের সঠিক মানসিক বিকাশের প্রতিও বিশেষ নজর দেয়া এবং এই বিষয়টিকে বিশেষ গাম্ভীর্যের সাথে দেখা।