টয়লেট ট্রেনিং একটি শিশুর জন্য বিকাশমূলক কাজ। বয়স বৃদ্ধির সাথে সাথে যেমন শিশুর শারীরিক ও মানসিক বিকাশ ঘটতে থাকে তেমনি টয়লেট ট্রেনিং শিশুর বিকাশেরই একটি অংশ। শরীর থেকে বর্জ্যদ্রব্য বের করে দেয়া একটি প্রাকৃতিক নিয়ম। শিশুকে মলমূত্র ত্যাগের প্রশিক্ষণ দেয়া বা টয়লেট ট্রেনিং করানো শিশু পালনের একটি গুরুত্বপূর্ণ অংশ। এটি একটি স্বাস্থ্যসম্মত অভ্যাস। প্রত্যেকটি সচেতন মায়ের গুরু দায়িত্ব হচ্ছে সঠিক সময়ে এই প্রশিক্ষণ দেয়া।
বিজ্ঞানীদের গবেষণা অনুযায়ী শিশুর ১৮ মাসের পর থেকে এই প্রশিক্ষণ দেয়া শুরু করলে তারা দ্রুত শিখতে পারে। তাহলে তারা ২২-৩০ মাসের মধ্যে এটি সম্পূর্ণভাবে আয়ত্ত করে ফেলতে পারে। তবে এই ক্ষেত্রে ছেলেদের তুলনায় মেয়ে শিশুরা এই অভ্যাসটি দ্রুত আয়ত্ত করতে পারে। শিশুদের মধ্যে দিনের বেলা মলমূত্র নিয়ন্ত্রণের দক্ষতা আগে আসে এবং পরে রাতে নিয়ন্ত্রণ করার দক্ষতা অর্জন করে।
◆ আগে দেখে নিন আপনার বাচ্চা টয়লেট ট্রেনিং এর জন্য প্রস্তুত কিনা-
টয়লেট ট্রেনিং শুরু করার পূর্বে এটি জেনে নেয়া জরুরি আপনার শিশুটি টয়লেট ট্রেনিং এর জন্য শারীরিক ভাবে প্রস্তুত কিনা। এই ট্রেনিং শুরু করতে হলে শিশুর পেশিগুলো মজবুত হয়েছে কিনা সেটি নিশ্চিত হতে হবে। শিশু বসতে শিখার আগে টয়লেট ট্রেনিং শুরু করা কোনো মতেই উচিত নয়। আপনার শিশুটি টয়লেট ট্রেনিং এর জন্য প্রস্তুত কিনা সেটি জানার জন্য কিছু বিষয়ের দিকে বিশেষ লক্ষ্য রাখতে হবে।
☆ শারীরিক সংকেত-
▪ঠিকমতো বসতে বা হাঁটতে পারছে কিনা।
▪নির্দিষ্ট সময় পর পর অথবা কাছাকাছি সময়ে মলত্যাগ করছে কিনা সেদিকে খেয়াল রাখতে হবে।
▪প্রশ্রাব করবার সময় একবারে পর্যাপ্ত পরিমাণে করছে কিনা। নাকি অল্প অল্প করে কিছুক্ষণ পর পর করছে।
▪জামা কাপড় পরার বা খোলার সময় সহযোগিতা করছে কিনা।
▪দিনে বা রাতে ঘুমালে অন্তত দুঘণ্টা শুকনো অবস্থায় থাকছে কিনা সেটি লক্ষ্য করতে হবে। এটি দ্বারা মূলত যাচাই করা যায় শিশুর ব্লাডার এর পেশিগুলো পূর্ণভাবে শক্তিশালী হয়েছে কিনা।
☆ আচরণগত সংকেত-
▪ নিজে নিজে প্যান্ট খুলতে বা পরতে পারা।
▪ ভেজা অবস্থায় অস্বস্তি বোধ করা ।
▪ টয়লেটের বেগ পেলে তা বলে বা ইঙ্গিত দিয়ে প্রকাশ করতে পারা।
▪ স্বাবলম্বী আচরণ করা।
▪ সহযোগিতা করতে আগ্রহ প্রকাশ করা।
▪ কোনো কিছু সফলভাবে করতে পারার পর সেটির জন্য গর্ববোধ করা।
▪ যেখানকার জিনিস সেখান রাখার বিষয়টি বুঝতে ও করতে পারা।
▪ 'মল' বা 'মূত্র' বোঝানোর মতো শব্দ রপ্ত করা।
◆ বাচ্চাদের টয়লেট ট্রেনিংয়ের কিছু কৌশল-
শিশুকে কখন ও কীভাবে প্রশ্রাব বা মলত্যাগ করতে হবে তা শেখানোর কিছু কৌশল আছে। বাচ্চাকে টয়লেট ট্রেনিং করানো অনেক ধৈর্যের ব্যাপার। এই ব্যাপারে শিশুকে কখনোই চাপ প্রয়োগ করা বা জোর করা যাবে না। বকা দিয়ে অথবা ভয় দেখিয়ে ট্রেনিং করা সম্ভব নয়। খুব ধৈর্য্য সহকারে এই বিষয়টি শিখাতে হবে।
যারা নতুন মা হয়েছেন তারা বুঝে উঠতে পারেন না যে কখন ও কীভাবে বাচ্চাকে এই ব্যাপারে ট্রেনিং দেয়া শুরু করবেন, কীভাবে বাচ্চাকে পটে বসতে অভ্যস্ত করবেন। এই টয়লেট ট্রেনিং এর কিছু কৌশল জেনে নিন।
- সবার আগে বুঝতে হবে আপনার বাচ্চা টয়লেট ট্রেনিং এর জন্য উপযুক্ত হয়েছে কিনা। বাচ্চার পেশি মজবুত হবার আগে শিশুকে টয়লেট ট্রেনিং দেয়া শুরু করা যাবে না। বাচ্চা নিজে নিজে বসতে শেখার পর ধীরে ধীরে এই অভ্যাসটি রপ্ত করতে হবে।
- শিশুরা ভীষণ অনুকরণ প্রিয় হয়। তাই শিশুদের তাদের পছন্দের পুতুলকে পটে বসানোর অভিনয় করে দেখিয়ে বোঝাতে হবে কীভাবে পটে টয়লেট করতে হয়।
- শিশুদের এই বিষয়ে আগ্রহ বৃদ্ধির জন্য বিভিন্ন গল্প শোনানোর মাধ্যমে পটের সাথে পরিচয় করাতে হবে। এই ব্যবহার সম্পর্কে জানাতে হবে।
- প্রথম থেকেই শিখাতে হবে যে টয়লেট ব্যবহার করার পর নিজেকে পরিষ্কার পরিচ্ছন্ন করতে হয়।
- শিশুকে ইলাস্টিক যুক্ত প্যান্ট পরাতে হবে যেন শিশু নিজের থেকেই প্যান্ট খুলে টয়লেট করতে পারে এবং টয়লেট শেষে আবার নিজে নিজে পরতে পারে।
- আজকাল ইউটিউবে এই বিষয় সম্পর্কিত অনেক ভিডিও পাওয়া যায়। যেগুলোতে গানে গানে বিভিন্ন কার্টুন এর মাধ্যমে এই বিষয়ে শিশুদের শিখানো হয়। এসকল জিনিসের প্রতি শিশুদের আকর্ষণ অনেক বেশি কাজ করে। তাই শিশুদের এই সকল ভিডিও বেশি বেশি দেখাতে হবে।
- অপরিচিত বা পরিবারের অন্যান্য সদস্যদের সামনে টয়লেট করে জিনিসটি যে উচিত নয় বা লজ্জাজনক ব্যাপার তা বিভিন্ন গল্পের আদলে বলে বুঝাতে হবে।
- বাজারে বিভিন্ন ধরনের টয়লেট করার পট পাওয়া যায়। শিশুর পছন্দের রং এবং আকর্ষণীয় ডিজাইন বা কার্টুনের পট কিনে দিতে হবে। যাতে শিশু নিজ আগ্রহে পটে বসতে চায়। পটে বসা শুরু করলে ধীরে ধীরে এর ব্যবহার সম্পর্কে জানাতে হবে।
- শিশু নির্দিষ্ট স্থানে টয়লেট করলে তার প্রশংসা করতে হবে। যাতে শিশু পরবর্তীতে এ বিষয়ে আগ্রহবোধ করে।
এই টয়লেট ট্রেনিং এর বিষয়টিতে শিশুকে কোনো প্রকার চাপ প্রয়োগ করা যাবে না। অথবা ভুল জায়গায় টয়লেট করলে শিশুকে ধমক দেয়া যাবে না। তাহলে শিশু ভয় পেয়ে যাবে। আর ভয় পেয়ে গেলে পরবর্তীকালে সে কাউকে এই বিষয়ে জানাতে চাইবে না। হয়তোবা টয়লেট চেপে রাখবে যা স্বাস্থ্যের জন্য ক্ষতিকর। অত্যন্ত ধৈর্যের সাথে গল্প বলে, কার্টুন দেখিয়ে, পুতুল দিয়ে অনুকরণ করে দেখিয়ে বুঝাতে হবে এবং হাতে সময় নিয়ে ধীরে ধীরে এই স্বাস্থ্য সম্মত অভ্যাসটি গড়ে তুলতে সাহায্য করতে হবে। টয়লেট ট্রেনিং এর বিষয়টিতে কোনো ধরনের তাড়াহুড়ো করা যাবে। এটি একটি দীর্ঘমেয়াদী প্রক্রিয়া। মায়েদের অত্যন্ত ধৈর্যের সাথে এই প্রক্রিয়াটি সম্পন্ন করতে হবে।